
এটিএন বাংলা, ওয়াসা ভবন, ২য় তলা, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ
ফোনঃ +88-02-55011931
এ সম্পর্কিত আরও খবর
’ইচ্ছে তো অনেক আপাতত যদি জীবন থেকে পালাতে পারতাম’। মারা যাওয়ার আগে এভাবেই ফেসবুকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন আবুল কালাম আজাদ। তবে কে জানতো সেটিই ছিল তার জীবনের শেষ ইচ্ছা, শেষ কথা। মাত্র পনের ঘণ্টা পরই যেন সত্যিই জীবন থেকে চিরতরে পালিয়ে গেলেন তিনি।রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার মাথায় আঘাত হানলে ঘটনাস্থলেই মারা যান এই ৩৬ বছর বয়সী যুবক।কিশোর বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে ভাইবোনের সংসারে বড় হয়েছেন আবুল কালাম। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই ছিল সংগ্রাম, পরিশ্রম আর দায়িত্ববোধের ছাপ। পরিবারের অভাব ঘোচাতে ২০১২ সালে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রম শেষে ২০১৮
সালে দেশে ফিরে পাশের গ্রামের মেয়ে আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। সুখের সংসারে তাদের আছে দুটি ছোট সন্তান। ছয় বছরের ছেলে ও চার বছরের মেয়ে। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় থাকতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন।রবিবার সকালে প্রতিদিনের মতোই নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে কাজে আসেন আবুল কালাম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় উপর থেকে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার মাথায় আঘাত করে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি, কয়েক মিনিটের মধ্যেই থেমে যায় তার নিঃশ্বাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই ধাতব অংশটি উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। কেউ বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।পরিবারের সদস্যরা জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আবুল কালামই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার হঠাৎ মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ছোট্ট ছেলে আব্দুল্লাহ আর মেয়ে সুরাইয়া এখনো বুঝে উঠতে পারেনি কেন বাবা আর ফিরে আসবে না। স্ত্রী আইরিন আহাজারি করে বলছিলেন, “গতকালও ও বলেছিল খুব ক্লান্ত লাগছে, একটু বিশ্রাম নিতে চায়... কে জানত এটাই তার শেষ বিশ্রাম হবে।ঘটনার প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুকে আবুল কালামের সেই হৃদয়বিদারক পোস্ট। ‘ইচ্ছে তো অনেক, আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম’। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন, হয়তো তিনি মানসিক চাপে ছিলেন, হয়তো ক্লান্ত ছিলেন জীবনের ভারে। কিন্তু কেউ কল্পনাও করতে পারেননি, এত দ্রুতই সত্যি হয়ে যাবে তার সেই আকুল ইচ্ছা। নিয়তির নিষ্ঠুর খেলায় জীবন থেকে সত্যিই পালিয়ে গেলেন আবুল কালাম আজাদ— রেখে গেলেন অসহায় এক পরিবার, স্তব্ধ এক শহর, আর কিছু না বলা কথার ভারী নীরবতা। /টিএ