
মেয়র হয়ে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য যে বক্তব্য দিলেন জোহরান মামদানি
হুবহু তুলে ধর হয়েছে-ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলছি, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার পরামর্শ হলো ভলিউম বাড়িয়ে নিন। আমেরিকার ইতিহাসে নিউইয়র্কের প্রথম মেয়র হওয়ার পর এভাবেই উচ্চস্বরে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন জোহরান মামদানি। তিনি বলেন আজ সন্ধ্যায় আমাদের শহরে সূর্য অস্ত গেছে। ইউজিন ডেপস একবার বলেছিলেন মানবতার জন্য এক উজ্জ্বল ভোরের সূচনা দেখতে পাচ্ছি। ধনী ও ক্ষমতাবানেরা নিউইয়র্কের পরিশ্রমী মানুষদের বারবার বলে এসেছে ক্ষমতা তাদের হাতে নয়। বাক্স তুলতে তুলতে যাদের হাতে কড়া পড়ে গেছে ডেলিভারি বাইকের হ্যান্ডেল যাদের তালুকে শক্ত করে ফেলেছে, রান্নাঘরের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে যাদের আঙ্গুল, এসব হাত কখনো ক্ষমতার নাগাল পায়নি।কিন্তু গত ১২ মাসে আপনারা সাহস করেছেন এক অসম্ভব স্বপ্ন ছোঁয়ার। আজ রাতে সব বাধা পেরিয়ে আমরা সেই স্বপ্নটাকেই ছুঁয়ে ফেলেছি। ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতে। বন্ধুরা আমার, আজ রাতে আমরা একজন রাজনৈতিক রাজার বংশকে পরাজিত করেছি। আমি এন্ড্রু কিউমোর ব্যক্তিগত জীবনের জন্য শুভকামনা জানাই, কিন্তু তার নাম উচ্চারণের শেষ হবে আজ রাতেই। কারণ আমরা এখন এমন রাজনীতির পাতা উল্টে ফেলে দিচ্ছি, যে রাজনীতি কেবল বাছাই করা কিছু মানুষের জন্যই কাজ করে, অথচ ভুলে যায় অধিকাংশের কথা।আজ রাতে আপনারা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন নতুন ধরনের রাজনীতির জন্য, এমন শহরের জন্য যেখানে সবাই বাঁচতে পারে। আর এমন সরকারের পক্ষে যারা সত্যিই নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। আগামী পহেলা জানুয়ারি আমি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে শপথ নেব।আমার আব্বা আম্মাকে বলছি, তোমরাই আমাকে আজকের আমি বানিয়েছো। আমি গর্বিত তোমাদের সন্তান হতে পেরে। আমার স্ত্রী রামাকে বলছি, হায়াতি, এই মুহূর্তে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমি তোমাকেই পাশে চাই, আর কাউকে না। অনেকে ভেবেছিল এই দিনটা কোনদিন আসবে না। অনেকেই ভয় পেত প্রতিটি নির্বাচনের পর সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আরো কমে যাবে, একই রকম হতাশার চক্রে আমরা আটকে থাকব। এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন রাজনীতির নিষ্ঠুর আঘাতে আশার প্রদীপ চিরতরে নিভে গেছে। কিন্তু আমরা সেই ভয়ের উচিত জবাব দিয়েছি। আমরা স্পষ্ট কন্ঠে বলেছি আশা এখনো বেঁচে আছে। এটা কোন অলৌকিক ব্যাপার নয়, এটা নিউইয়র্কবাসীর প্রতিদিনকার সিদ্ধান্ত, প্রতিদিনের কাজকর্মে। আক্রমণাত্মক প্রচারণা সহ্য করেও তারা আশার পক্ষ নিয়েছে। আমাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ আজ গির্জায়, জিম্নেশিয়ামে, কমিউনিটি সেন্টারে দাঁড়িয়ে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন গণতন্ত্রের খাতায়। আমরা ভোট একা দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু পক্ষ বেছে নিয়েছি একসাথে। স্বৈরাচারের বদলে আশা, টাকার দাপট ও ক্ষুদ্র চিন্তার বদলে পরিবর্তনের প্রত্যাশা, হতাশায় ভেঙে পড়ার বদলে টিকে থাকার আশা আমরা জিতেছি। কারণ নিউইয়র্কবাসী বিশ্বাস করেছে যে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আমরা জিতেছি কারণ আমরা মেনে নিতে রাজি নই রাজনীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া কোন খেলা। এখন আমরা নিজেরা যা করব, সেটাই হবে রাজনীতি। আমার মনে পড়ছে জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত উক্তি: ইতিহাসে খুব কম সময়ই আসে যখন আমরা পুরনো থেকে নতুনে পা রাখি, যখন একটি যুগের অবসান হয় আর জাতির বহুদিনের নীরব আত্মা নতুন কন্ঠ পায়। আজ রাতে আমরাও পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনের পথে পা রেখেছি। যাদের আমরা ভালোবাসি তাদের পাশে দাঁড়ানোই আসল সাহস। আপনি যদি অভিবাষী হন, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির সদস্য হন, কৃষ্ণাঙ্গ নারী হওয়ায় ট্রাম্প যদি আপনাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করে থাকে, কিংবা আপনি যদি জিনিসপত্রের দাম কমার আশায় থাকা একজন সিঙ্গেল মাদার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার লড়াই আমাদেরও লড়াই। আমরা এমন এক সিটি হল গড়ে তুলব যা অটলভাবে নিউইয়র্কের ইহুদিদের পাশে দাঁড়াবে, লড়াই করবে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে। আর শহরের এক মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান জানবে শুধুমাত্র নিউইয়র্কের পাঁচটি বিভাগেই নয়, বরং ক্ষমতার অন্দরমহল পর্যন্ত এখানে তারা আপন। ইসলাম বিদ্বেষকে হাতিয়ার বানিয়ে আর কখনোই কেউ নির্বাচনে জিততে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রতারিত জাতি দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে তাকে পরাজিত করা যায়। এই শহরই সেটা দেখিয়েছে যেখান থেকে তিনি উঠে এসেছেন। একজন স্বৈরাচারকে ভয় দেখানোর উপায় হলো তার ক্ষমতার ভিত্তিগুলো ধ্বংস করা। এটি শুধুমাত্র ট্রাম্পকে হারানোর পথ নয়, বরং এভাবেই আমরা পরের জনকেও থামাবো। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলছি, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার পরামর্শ হলো ভলিউম বাড়িয়ে নিন। আমরা বাড়িওয়ালাদের ভালো করে ধরবো। এই শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পদের মত লোকেরা ভাড়াটিদের শোষণ করে মজা পেয়ে গেছে। বিলিয়নিয়ারদের কর মুক্তি ও কর সুবিধা দেয়া দুর্নীতির আমরা অবসান ঘটাবো। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পাশে দাঁড়াবো, সংরক্ষণ করব তাদের অধিকার। আমরা জানি, ট্রাম্পও জানেন শ্রমিকের অধিকার অটুট থাকলে তাদের অত্যাচারী বসদের ক্ষমতা কমে যায়। নিউইয়র্ক থাকবে অভিবাষীদের শহর যে শহর গড়ে উঠেছে অভিবাষীদের হাতে, টিকে আছে অভিবাষীদের চেষ্টায় এবং আজ রাত থেকে সেটা পরিচালিতও হবে একজন অভিবাষীর মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমার কথা শুনে রাখুন, আমাদের কাউকে ধরতে হলে আপনাকে আগে আমাদের সবাইকে পার হয়ে যেতে হবে। একসঙ্গে বলুন: আমরা নির্ধারণ করব বাসাভাড়া। আমরা বাস চালাবো দ্রুত এবং সেগুলো হবে বিনামূল্যের। আমরা একসঙ্গে নিশ্চিত করব সার্বজনীন চাইল্ড কেয়ার।