
এটিএন বাংলা ডেস্ক:
পৌরসভা নির্বাচনে প্রতীক পাওয়ার পর নির্বাচনী প্রচরণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। এবারের পৌর নির্বাচনে সারা দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯২১।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩৩, বিএনপির ২১৯, জাতীয় পার্টির ৭৩, স্বতন্ত্র ২৭১ প্রার্থী এবং অন্যান্য দলের ১২৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৭ জন।
সোমবার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা র্প্রাথীদের প্রতীক বরাদ্দ করেন। স্থানীয় সরকারে এই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে বলে মেয়র পদপ্রার্থীরা নিজ নিজ দলের মার্কা নিয়েই নির্বাচন করছেন।
তবে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের জন্য আলাদা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় মিছিল, জনসভা বা কোনো ধরণের শোডাউন না করে আচরণ বিধি মেনে চলতে প্রার্থীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সুনামগঞ্জের ৪ পৌরসভায় প্রতীক বরাদ্দ শেষ করেছেন রিটার্নিং অফিসাররা। জেলার চার পৌরসভার ১২ মেয়র প্রার্থীসহ ১৫০ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনের ৪৩ জন কাউন্সিলররা নিজ নিজ প্রতীক বুঝে নিয়েছেন।
সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সুনামগঞ্জ পৌরসভার রিটার্নিং অফিসার মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, দিরাই পৌরসভার রিটার্নিং অফিসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, ছাতক পৌরসভায় রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম, জগন্নাথপুর পৌরসভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকতা মো. হুমায়ুন কবীর স্ব স্ব পৌরসভা এলাকার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের চিঠি তুলে দেন।
মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুলকে নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান গনিউল সালাদীনকে মোবাইল এবং বিএনপি প্রার্থী অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদকে ধানের শীষ প্রতীকের চিঠি তুলে দেন।
ছাতক পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র আবুল কালামকে নৌকা, বিএনপি প্রার্থী শামছুর রহমান সামছুকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়।
দিরাই পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোশারফ মিয়াকে নৌকা, বিএনপি প্রার্থী মঈনুদ্দিন চৌধুরী মাসুককে ধানের শীষ, জাপার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক সর্দারকে লাঙ্গল, জাসদে প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেনকে মশাল প্রতীক বরাদ্দ করা হয়।
জগন্নাথপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মনাফকে নৌকা, বিএনপি প্রার্থী মো. রাজু আহমদকে ধানের শীষ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল করিমকে জগ প্রতীক তুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়।
এদিকে টাঙ্গাইলের ৮টি পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আসেন প্রতীকের জন্য।
রিটার্নিং অফিসার দলীয় মেয়র প্রার্থীদের হাতে দলীয় প্রতীক তুলে দেন। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের লটারির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক বুঝে পেয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার প্রচারনায় নেমেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২৫ জন, কাউন্সিলর পদে ২৬৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সোমবার সাতক্ষীরায় পৌর নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএফএম এহতেশামুল হক জানান, মেয়র পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
এর মধ্যে পৗর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাছকিন আহমেদ চিশতি পেয়েছেন ধানের শীষ। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু পেয়েছেন নারিকেল গাছ প্রতীক।
তিনি আরও জানান, কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রার্থীদেরও বিভিন্ন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার আবুল হোসেন জানান, সেখানে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৬ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকা পেয়েছেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতিক ধানের শীষ পেয়েছেন বর্তমান মেয়র আক্তারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মুনসুর আলী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিদ্রোহী প্রার্থী আরাফাত হোসেন পেয়েছেন মোবাইল প্রতীক।
অপরদিকে নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরা ও কলারোয়া পৌর এলাকায় জমে উঠেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। শুরু করেছে নির্বাচনী পথসভা ও মতবিনিময়। দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হয়েছে পোস্টার। শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। রয়েছে ব্যানারও।
আর নির্বাচনের ‘প্রতিশ্রুতি’ তো রয়েছেই। সাতক্ষীরা পৌর সভার ৭৯ হাজার ভোটার ও কলারোয়া পৌরসভার ১৮ হাজার ৫২৫ জন ভোটার মধ্যে এবার কে হবেন আগামী দিনের পৌর পিতা সেটাই এখন বিভিন্ন চায়ের স্টলে আলোচনার বিষয়।
এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ ও রামগতি পৌরসভার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও স্বতন্ত্র মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে স্ব-স্ব রিটার্নিং অফিসার সকল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
জেলা নির্বাচন অফিসরা মো. সহেল সামাদ জানান, তিন পৌরসভায় ১৩ মেয়র, সংরক্ষিত নারী ও কাউন্সিলর পদে ১৪৫জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্নভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এ তিন পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৬৭ হাজার ১০৩জন। এদের মধ্যে রায়পুর পৌরসভা ভোটার সংখ্যা ২২১১জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৩শত ৬৯ ও মহিলা ৯ হাজার ৮শত ৪২জন। রামগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার ২৯ হাজার ৫শত ১৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৮শত ৬৬ ও মহিলা ১৪ হাজার ৬শত ৫০।
অপরদিকে রামগতি পৌরসভা ১৭ হাজার ৩শত ৭৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৯শত ৯ ও মহিলা ৮ হাজার ৪শত ৭৬জন ভোটার রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাভার পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে উপজেলার অডিটরিয়ামে সিনিয়র জেলা নির্বাচন রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাথী আব্দুল গনীকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের বিভিন্ন ধরনের মার্কার প্রতীক দেওয়া হয়।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরে দলীয় প্রতীকে ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে প্রার্থীরা। সাভার পৌর সভা নির্বাচনে ২ নং ও ৮ নং ওয়ার্ডে কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় ২ নং ওয়ার্ডে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মোল্ল্যা ও ৮ নং ওয়ার্ডে সেলিমকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশনার।
কুষ্টিয়ায় পৌর নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবউল ফেরদৌস সদর পৌর নির্বাচনে প্রার্থীদের হাতে প্রতীক তুলে দেন।
এসময় মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাকি ৪টি পৌরসভাতেও একই সময় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সোমবার কুমিল্লার ৬টি পৌরসভার ২৬জন মেয়র, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৪৫জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে ২২৮জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
চট্টগ্রামের পটিয়া, সীতাকুন্ডসহ দশ পৌরসভায় মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার পর নিজ নিজ প্রচারণায় নেমে পড়েন।
সিলেট জেলায় প্রথম দফায় ৩টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এরিমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন।
বরিশালে ৬টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণয় নেমে পরেন।
ময়মনসিংহে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে পৌর শহরে মিছিল এবং প্রচারণা কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে এর সঙ্গে পাড়া মহল্লায় বেরিয়েয়ে পরে এ প্রচারণা।
নারায়ণগঞ্জের তারাব ও সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছে প্রার্থীরা। অন্যদিকে ঢাকার ধামরাইয়ে প্রার্থীদেরও সকাল থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।