
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বুধবার দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। এই প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, আর এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই সাধারণ পর্যায়ে।
দলীয় ভিত্তিতে পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার পরিষদের একটি নির্বাচন দেয়ার ফলে , পুরোপুরি জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ ভোটযুদ্ধ। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকের এ লড়াই দেশের ইতিহাসে প্রথম বলে, এর মাধ্যমে তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন এক ধারা।
এ লড়াইও যথারীতি মূলত সেই দুই দলের। সেই আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, সেই নৌকা বনাম ধানের শীষ।
প্রায় সাত বছর পর রাজনীতির মাঠের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ ও বিএনপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে বুধবার। দলীয় প্রতীকে মাধ্যমে পৌর নির্বাচনে এই লড়াই হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসেও এটাই প্রথম রাজনৈতিক লড়াই। তাই ভোটেরআগে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে টানাটানি কারেছে দুই বড় দলই।
জাতীয় নির্বাচনের আমেজ নিয়ে পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয় ৯ ডিসেম্বর। আর ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের প্রতীকসহ প্রচার কার্যক্রম। পৌরসভায় দু সপ্তাহের টানা প্রচার শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে।
অন্যদিকে তফসিল ঘোষনার পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় আচরণ বিধি লঙ্ঘন, হুমকি হামলার ঘটনায় সারাদেশের ১ হাজার ৬১৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন যা মোট ভোট কেন্দ্রের অর্ধেক।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৭৪ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য কাজ করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।
সারা দেশের মোট ৩২৩টি পৌরসভার মধ্যে এবার নির্বাচন হচ্ছে ২৩৪টিতে। নিবন্ধিত ৪০টির মধ্যে অংশ নিচ্ছে ২০টি রাজনৈতিক দল।
সারাদেশে মেয়র পদে মোট প্রার্থীরসংখ্যা ৯৪৫। সবক’টি পৌরসভাতেই প্রার্থী আছে শুধু আওয়ামী লীগের। বিএনপি’র আছে ২২৩টিতে, জাতীয় পার্টির ৭৪ , জাসদের ২১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির আটটিতে। এছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থী ১০০ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৮৫ জন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতা, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন। নিবন্ধন বাতিল বলে জামায়াতের নেতারাও আছেন এ তালিকায়।
এদিকে ভোটের আগেই, মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন সাতজন, সবাই-ই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন।
দেশের সাড়ে ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে পৌরসভাগুলোতে আছেন প্রায় ৭১ লাখ ভোটার। এই তালিকায় নারী ও পুরুষ ভোটারের অনুপাত প্রায় সমান। মেয়রের পাশাপাশি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৪৮০ জন নারী এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৭৪৬ কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করবেন তারা।
বড় দুই দল আ. লীগ ও বিএনপি নিজেদের প্রার্থী দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, একে অপরের দোষারোপও করে যাচ্ছেন সমান তালে। তারপরও ভোটারদের চাওয়া সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। দলীয় প্রতীকের চেয়ে তারা বড় করে দেখছেন প্রার্থীদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা।
নির্বাচনের আগের দিন মঙ্গলবার বড় দুই দল-ই নির্বাচন অফিসে নিজেদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বিমাতাসুলভ আচরণের অভিযোগ এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার বিকেলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে।
প্রায় আধ ঘন্টার বৈঠক শেষে হানিফ জানান, বিএনপি সংসদের বাইরে বলে নির্বাচন কমিশনের আনুকুল্য পাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করেন। এসময় তার ভোটের ফল পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ইসিকে শক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
পরে সাংবাদিকদের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে যেকোন ফলাফল মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান।
অপরদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবী, বুধবার পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে না যেতে জনগণকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারের পক্ষে হুমকি দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির প্রার্থীদের নানা হুমকি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনে বারবার এসব তথ্য জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বরং বিএনপির অভিযোগ হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছে তারা।
সরকারের স্বৈর আচরণ বাস্তবায়নে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলেও জানান তিনি। তিনি জনগণকে সরকারের সব বাধা অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উত্তর দেয়ার আহবান জানান।