
তামিম, ইমরুল আর মাহমুদুল্লার অর্ধ-শতকের পর মুস্তাফিজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ৬১ রানে জয়ী হয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করল বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করে। দলের পক্ষে তামিম ও ইমরুল ৭৩ করে এবং মাহমুদুল্লাহ করেন ৫২ রান। জবাবে মুস্তাফিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মত ৫ উইকেটের উপর ভর করে জিম্বাবুয়েকে ২১৫ রানে অল-আউট করে দেয় টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে উইলিয়ামস করেন ৬৪ রান। এছাড়িা চিগুম্বুরা করেন ৪৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজ ৩৪ রানে ৫ উইকেট লাভ করেন। এছাড়া মাশরাফি, নাসির, সাব্বির, আরাফাত সানি এবং আল-আমিন প্রত্যেকে একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে ২৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারিয়ে চাপে পরে জিম্বাবুয়ে। মোস্তাফিজ নিজের প্রথম বলে চার খেলেও দ্বিতীয় বলে বোল্ড করেন চিবাবাকে। এর পর ৪৩ রানের মাথায় মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন চাকাবা। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় নাসির আরভিনকে ফেরালে চাপে পরে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেখান থেকে চিগুম্বুরা আর উইলিয়ামসন দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দুজনে মিলে গড়ে তোলেন ৮০ রানের পার্টনারশিপ। নিয়মিত বোলাররা যখন এই জুটিকে আউট করতে পারছিল না তখনই মাশরাফি বল তুলে দেন পার্ট টাইমন বোলার সাব্বির রহমান হাতে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন ব্যাটিংয়ে ভাল করতে না পারা সাব্বির। নিজের দ্বিতীয় ওভারে চিগুম্বুরাকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন সাব্বির।
এর পরও ওয়ালারকে নিয়ে চেস্টা চালিয়ে যাচিছলেন উইলিয়ামস। উইলিয়ামস তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধ-শতক। কিন্তু ১৮৬ রানের মাথায় ওয়ালারকে আলআমিন এবং ১৮৮ রানে ৬৪ রান করা উইলিয়ামসকে মাশরাফি ফেরালে জিম্বাবুয়ের জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
২০৭ রানের মাথায় সিকান্দার রাজা আর জংওয়েকে পর পর দুই বলে আউট করে জিম্বাবুয়েকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মুস্তাফিজ। ২০৯ রানের মাথায় পানিয়াঙ্গারাকে আউট করে ক্যারিয়ারের তৃতীয় বারের মত ৫ উইকেট লাভ করেন মুস্তাফিজ।
এর আগে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশের লক্ষ্যে, সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মিরপুরে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবার ৭৩ করে এবং মাহমুদুল্লাহ করেন ৫২ রান।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু খানিকটা ধীর গতিতে হলেও, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়ান তামিম ও ইমরুল। তবে, তামিমের চেয়ে বেশি আক্রমনাত্বক ব্যাটিং করে টানা দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল। এরপর নিজের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম ইকবাল।
ওপেনিং-এ শতরানের পার্টনারশিপও হয়েছে তামিম-ইমরুলের ব্যাটে। দুজনের যাচ্ছিলেন ব্যক্তিগত শতরানের দিকে। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় সিকান্দার রাজার একটি বল ডাইন দ্যা উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন ইমরুল। আউট হবার আগে ৯৫ বলে চারটি ছক্কা এবং ছয়টি চারের মাধ্যমে করেন ৭৩ রান।
এর পর টানা ব্যর্থ লিটন দাসের পরিবর্তে তিন নাম্বারে নামেন মুশফিকুর রহীম। তামিমের সাথে দারুণ খেলতে থাকেন তিনি। ১৭৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭৩ রানে ক্রিমারের বলে স্ট্যাম্পিং হন তামিম। ৯৮ বলের ইনিংসে ছিল একটি ছয় এবং সাতটি চারে সাজানো।
তামিমের আউটের পর চার নাম্বারে নামেন লিটন দাস। কিন্তু লিটন মুশফিক জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৯০ রানের মাথায় মাত্র ২৫ বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে দলের টানা তৃতীয় ব্যাটমম্যান হিসেবে স্ট্যাম্পিং হন মুশফিক। এবারে বোলার ছিলেন ওয়ালার।
মুশফিক আউট হবার পর পাঁচ নাম্বারে নামেন মাহমুদুল্লাহ। লিটন মাহমুদুল্লাহ মিলে দলকে বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু আবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ লিটন। ১৭ রান করে ক্রেমারের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন তিনি। শুরু হয় বাংলাদেশের িইনিংসে ছোট ধস। ৪ রানের বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট। ২২২ রানের মাথায় লিটন আউট হবার পর ২২৬ রানে আউট হন সাব্বির আর নাসির।
পরে মাহমুদুল্লাহ ভাগ্যক্রমে অবিশাস্যভাবে রান আউটে থেকে বেঁচে না গেলে আরও বিপদে পরত বাংলাদেশ। আউট হয়ে সীমানা পর্যন্ত যেয়ে ভাগ্যক্রমে আবার ফিরে এসে অধিনায়ক মাশরাফিকে দারুন ব্যাট করেন মাহমুদুল্লা। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪ তম হাফ-সেঞ্চুরি। এর মাঝে অবশ্য মাশরাফি ফিরে যান ১১ বলে কার্যকরী ১৮ রান করে।
শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৫২ রান করে ২৭৫ রানের মাথায় সেই রান আউটই হন মাহমুদুল্লাহ। আরাফাত সানি অপরাজিত থাকেন তিন রানে। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রানে।
জিম্বাবুয়ের জংওয়ে ও ক্রেমার দুটি করে এবং পানিয়াঙ্গারা, সিকান্দার রাজা ও ওয়ালার একটি করে উইকেট লাভ করেন।
৭৩ রান করে ওপেনার তামিম ইকবাল ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন। আর সিরিজ সেরা হন মুশফিকুর রহীম।