ভয়ংকর অর্থ সংকটে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র

ভয়ংকর অর্থ সংকটে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র
কংগ্রেস যদি যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম না হয় তাহলে আসছে জুলাই মাসেই যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক স্থবিরতায় আক্রান্ত হতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রকল্প থমকে দাঁড়াতে পারে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্টে এমন পরিস্থিতির আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
বাজেট অফিস উল্লেখ করেছে, সরকারি কোষাগার থেকে ফেডারেল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তা ইতিমধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে। তাই কংগ্রেসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঋণের সীমা বৃদ্ধি অথবা এ পর্যন্তই স্থির রাখতে। বৃদ্ধি করা না হলেও ফেডারেল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে যদি ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত গত বছরের ট্যাক্স রিটার্নের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (জরিমানা ছাড়া) অনেক বেশি পরিমাণের অর্থ জমা হয়। তবে নানাবিধ কারণে সে ধরনের অর্থ জমা হবে বলে কেউই মনে করছেন না। অর্থাৎ কংগ্রেসকে ঋণের সীমা বাড়াতে হবে এবং এটাই চাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ডেমক্র্যাটদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হননি বলে ক্যাপিটল হিল সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গতমাসে বাইডেনের অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারী সেক্রেটারি) জ্যানেট ইয়েলেন কংগ্রেসের নেতাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন যেখানে উল্লেখ করা হয় উদ্ভুত পরিস্থিতির তথ্য। সেখানে অর্থমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে বিশেষ একটি ব্যবস্থায় ‘ঠেকার কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে’। তাই যত দ্রুত সম্ভব ঋণের পরিমাণ ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বাড়ানোর উদাত্ত আহ্বান উচ্চারিত হয় ঐ পত্রে। অন্যথায় ফেডারেল সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ অনেককিছু থমকে দাঁড়াবে-যা কারো জন্যই শুভ কিছু হবে না। অর্থাৎ সরকার খেলাপিতে চিহ্নিত হবে, যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় আক্রান্ত তা ঢেকে রাখা সম্ভব হবে না। পরিণতিতে নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলেও আশংকা করেন অর্থমন্ত্রী।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের এই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, অর্থ সংকট ঠেকানোর বিশেষ ব্যবস্থা কোনমতে জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। এবং তা সর্বোচ্চ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেনে নেয়া যেতে পারে। এহেন অবিশ্বাস্য পরিস্থিতির আশংকা প্রকাশ করে এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অসাধারণ ব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে ঋণের সীমা বাড়ানো বা স্থগিত করা না হলে, সরকার তার ব্যয়-বরাদ্দ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধে অক্ষম হবে। ফলস্বরুপ, সরকারকে জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের অর্থ প্রদান করতে বিলম্ব করতে হবে, যা সরকারের অপারগতার সামিল হবে। খেলাপিতে চিহ্নিত হবে বাইডেন প্রশাসন।’
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাগুলো মাসে চারবার বিতরণ করা হয় যার পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ হেলথকেয়ার প্ল্যান (চিকিৎসা-সেবা) এবং মেডিকেয়ার পার্ট-ডি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ প্ল্যানের জন্য অর্থ প্রদানও মাসের প্রথম তারিখে করা হয়, এখাতে লাগে ৪০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া প্রতিমাসের শুরুতেই সামরিক, বেসামরিক কর্মচারি, ভেটের‌্যান্স এবং অন্যদের বেতন বা সুবিধার প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়। একইসময়ে মাসের ১৫ তারিখ এবং শেষ দিনে কোষাগার থেকে নেয়া ঋণের সুদ প্রদান করতে হয়।
আরো উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই গতবছরের আয়-ব্যয়ের ওপর ট্যাক্স রিটার্ন শুরু হয়েছে। স্বল্প ও মাঝারি আয়ের লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ফেডারেল ও রাজ্য থেকে অনেক অর্থ পাবেন পুষ্টিকর খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণের অর্থ লাগবে এখাতে। এটি অবশ্য পুষিয়ে নেয়ার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা কর্পোরেট আয়ের ত্রৈমাসিক কিস্তি ১৮ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের মাধ্যমে।
জানা গেছে, হোয়াইট হাউজ কংগ্রেসকে ঋণের সীমা বাড়ানোর আহবান জানিয়ে ইতিমধ্যেই রিপাবলিকান নেতাদের সাথে বৈঠকও করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে বিলের ব্যাপারে সরাসরি সম্মতি প্রকাশ না করে রিপাবলিকানরা ব্যয় সংকোচনের পরামর্শ দিয়েছেন এবং জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পে কাটছাটের কথা বলেছেন। বাইডেন কিংবা ডেমক্র্যাটরা এ অবস্থায় বিব্রত। তবে দেন-দরবার অব্যাহত রয়েছে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে। এমনি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই মার্চে হোয়াইট হাউজ সামনের অর্থ বছরের বাজেট পেশ করবে।