
এই ঈদে ৮টি সিনেমা মুক্তি পেল। এর মধ্যে রয়েছে তরুণ নির্মাতা সুমন ধর পরিচালিত ‘শত্রু’। ঈদের আমেজে দেখে ফেললাম চলচ্চিত্রটি। অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী একাই ছবিটি টেনে নিয়ে গেছেন। তার অভিনয় দক্ষতা আগের চেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে, পরিপূর্ণ মসলাদার সিনেমা ‘শত্রু’। ঈদে মুক্তির জন্য পারফেক্ট একটা ছবি। আগে থেকে প্রচারণা করতে পারলে, এটি আরও বেশিসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ পেত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
একটা সিনেমা সবার কাছেই ভালো লাগবে, বিষয়টি তো এমন নয়, ‘শত্রু’ মূলত গণমানুষের ছবি। তরুণ পরিচালক সুমন ধর প্রথম ছবি হিসেবে এটা খুবই ভালো বানিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, আরও একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে কাজটি করলে, আরও ভালো হতে পারত। নির্মাতাও চেষ্টা করেছেন, সিনেমাটি দেখে তা বুঝা যায়।
‘শত্রু’র গল্পটিও খুব সুন্দর। ছবিটি পুলিশদের কেন্দ্র করে। এই ধরনের সিনেমা নির্মাণ আমাদের দেশে বেশ চ্যালেঞ্জিং বটে। পুলিশদের নিয়ে এমন ধরনের সিনেমা এর আগে কখনো দেখিনি। তাদের টাইটেল ট্র্যাকটিও পুলিশদের নিয়ে, যা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। গানটি উৎসর্গও করা হয়েছে তাদের। দেখেন, কোনো বিপদে পড়লে আমরা কিন্তু পুলিশের কাছেই ছুটে যাই, তাই তাদের সম্মান জানানোর বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
সিনেমাটির মার্কেটিং পলিসি ভালো ছিল। পোস্টারে বাপ্পির লুক প্ররোচনা জুগিয়েছে। কিছু বিষয় বাদ দিলে এই সিনেমায় তাকে নতুন রূপে দেখা গেছে। অভিনেতা হিসেবে তার এই পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। আর মিশা সওদাগর তো এই সময়ের গুণী অভিনেতা। ওটিটিতে খুব একটা কাজ করেননি, কিন্তু ওয়েব ফিল্ম ‘যদি আমি বেঁচে ফিরি’ যারা দেখেছেন, তারা জানেন তিনি কতটা দুর্দান্ত অভিনেতা। ‘শত্রু’তেও মিশা ভাই নিজেকে ভেঙেছেন। জাহারা মিতুও চেষ্টা করেছেন। এ সিনেমায় তার ডায়লগ ডেলিভারি (সংলাপ বিনিময়) আরও ভালো হতে পারত!ছবিটির দৃশ্যায়ন, লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি—সবকিছুই খুব সুন্দর। তবে আবহসংগীত আরেকটু ভালো হলে আরাম পেতাম। আরেকটি বিষয়, ঢালিউড সিনেমার কোনো কিছু যদি বলিউড বা হলিউডের সঙ্গে তুলনা করি, সেটা তো ঠিক হবে না। আমাদের দেশে সিনেমায় যেমন বাজেট হয়, সেই হিসেবে সর্বোচ্চ ভালোর চেষ্টাই করেছেন সুমন ধর। যেহেতু নতুন পরিচালক, আমি আশা করি—পরবর্তী সিনেমায় তিনি আরও ভালো করবেন।
‘পুলিশ’ গান নিয়ে কোনো কথা নেই। অন্য আরেকটি গান রয়েছে এ সিনেমায়, যেখানে হিন্দি ভাষার ব্যবহার হয়েছে, সেটা আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লেগেছে। কারণ, হিন্দির ব্যবহার গানের মধ্যে কেন? সেটা কোনো সিক্যুয়েন্সে কিংবা সংলাপে রাখা যেত, কেউ যদি এ সিনেমায় ভারতীয় চরিত্রে থাকতেন তবে সেটা গল্পের স্বার্থে হতেই পারে। কিন্তু এখানে বিষয়টি তো তেমন নয়, তাহলে এভাবে হিন্দি ঢুকানোর প্রয়োজনটা কী? আমি কোনো যুক্তি দেখি না।
যাই হোক, প্রেক্ষাগৃহে একটা সিনেমা মুক্তি দেওয়া মানে একজন নির্মাতার জন্য অনেকটা যুদ্ধের মতোই। আর প্রথম সিনেমা হিসেবে নির্মাতা সুমন ধরও বেশ ভালো করেছেন।