
ওয়ানডে ক্রিকেটে ইবাদত হোসেনের শুরুটা হলো রঙিন। আর নিজেদের ৪০০তম ওয়ানডে ম্যাচটা জয় দিয়ে রাঙালো বাংলাদেশ। গতকাল সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১০৫ রানে হারায় টাইগাররা।
ওয়ানডেতে ৪০০ ম্যাচে এটি ১৪৪তম জয় বাংলাদেশের। ২০০১ সালের পর জিম্বাবুয়ের কাছে হোয়াইওয়াশ হওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল সেটিও কাটলো এই জয়ে। গতকাল হারারেতে বাংলাদেশের ২৫৬ রানের জবাবে ৩২.২ ওভারে ১৫১ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ জিতলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিম্বাবুয়েরই। এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও স্বাগতিকরা জেতে ২-১ ব্যবধানে। ২৫৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ৮৩ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসেছিল জিম্বাবুয়ে। যেখানে একশ’র আগে গুটিয়ে যাওয়ার কথা, সেখান থেকে দেড়শ’ পেরিয়ে থামে দলটি।
৫৮ বলে ৬৮ রানের জুটি উপহার দেন শেষ দুই ব্যাটার রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিয়াউচি। দশম উইকেটে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড জুটি এটি। শিঙ্গিরাই মাসাকাদজা ও ইয়ান নিকোলসন ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ জুটিতে তুলেছিলেন ৬০ রান। তবে হারারেতে অভাবনীয় কিছু ঘটেনি শেষতক। ভিক্টর নিয়াউচিকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের লড়াইয়ের ইতি টানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচে তার শিকার ১৭ রানে ৪ উইকেট। তবে গতকাল আসল কাজটি করেন অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেন। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে কাঁদানো সিকান্দার রাজাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি ইবাদত।
দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন রাজাকে। টানা দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান গতকাল মারেন ‘গোল্ডেন ডাক’। এর আগে ওয়েসলি মাধেভেরেকে সাজঘরে ফিরিয়ে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের স্বাদ নেন ইবাদত। ৮-১-৩৮-২, এই হলো ইবাদতের বোলিং স্পেল। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও দারুণ বল করেন। ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা জিম্বাবুয়েকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ দেননি তাইজুল। স্বাগতিকদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট নেন এ বাঁহাতি স্পিনার। তাইজুলের শিকার ইনোসেন্ট কাইয়া (১০) ও টনি মুনিওঙ্গা (১৩)। তাইজুলের পর দৃশ্যপটে মোস্তাফিজুর রহমান। ২১তম ওভারে পঞ্চম বলে মোস্তাফিজ আউট করেন লুক জংওয়েকে (১৫)। এক ওভার বিরতি দিয়ে আক্রমণে এসে মোস্তাফিজ পান জোড়া উইকেটের দেখা।
তিন বলের ব্যবধানে মোস্তাফিজ ফেরান ক্লাইভ মাদান্দে (২৪) ও ব্রাড ইভান্সকে (২)। ৮৩ রানে নবম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। গত বছর হারারেতে ১২১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন ইনিংস এটি তাদের। নিয়াউচিকে নিয়ে সেই স্কোর পেরিয়ে যান এনগারাভা। ২৭ বলে ৬ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। এর আগে ২১ ওয়ানডে খেললেও কখনো ১০-এর বেশি করতে পারেননি এনগারাভা। ৩১ বলে ২৬ রান করে আউট হন নিয়াউচি।
এর আগে আফিফ হোসেনের হার না মানা ৮৫ এবং এনামুল বিজয়ের ৭৬ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ২৫৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। লড়াকু ইনিংসে ম্যাচসেরা হন আফিফ। পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘জয়ী দলে থাকতে পারাটা ভালো ব্যাপার। আমি মনে করি, আমরা চৎমকার খেলেছি আজ। কিন্তু আমাদের বোলিংয়ে আরো উন্নতির প্রয়োজন। বিশ্রাম নিয়ে এশিয়া কাপের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বো এবার।’ অধিনায়ক তামিমও আফিফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘আফিফ যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা দেখা ছিল মনোমুগ্ধকর। তার টাইমিং ভালো ছিল।
সত্যিই দারুণ ব্যাট করেছে সে।’ বোলারদের কৃতিত্ব দিয়ে তামিম বলেন, ‘যখন ৩০০ রান করে আপনি হেরে যাবেন, সে হিসাবে ২৫০ রান ২০০-এর মতো। আজ (গতকাল) শুরুতেই ৫টি উইকেট তুলে নিতে পেরেছি আমরা।’ ইবাদতের রঙিন অভিষেকে উচ্ছ্বসিত তামিম ইকবাল। তাকে কেন এতদিন খেলানো হয়নি সে প্রশ্ন রেখে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ইবাদত দলের সঙ্গে আছে। তাকে একাদশে নেয়া হতো না দেখে আমি বিস্মিত হতাম। সৌভাগ্যবশত সে এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছে এবং নিজেকে প্রমাণও করেছে।